গুগল মাই বিজনেস (GMB) কী এবং কেন এটি আপনার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ—১০ টি উপকারী দিক

গুগল মাই বিজনেস, যা এখন গুগল বিজনেস প্রোফাইল নামে পরিচিত, একটি বিনামূল্যের টুল যা গুগল সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে যেকোনো ছোট বা বড় ব্যবসা তাদের অনলাইন উপস্থিতি তৈরি করতে পারে এবং গুগলের সার্চ রেজাল্ট ও গুগল ম্যাপে নিজেদের তথ্য প্রদর্শন করতে পারে। 
গুগল মাই বিজনেস এর গুরুত্ব-important of Google my business
যখন কোনো সম্ভাব্য কাস্টমার আপনার এলাকার কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সার্ভিস খোঁজে, তখন GMB প্রোফাইল আপনার ব্যবসাকে তাদের সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

GMB কেন আপনার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

স্থানীয়ভাবে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি: GMB প্রোফাইল থাকলে আপনার ব্যবসা স্থানীয় সার্চে (Local Search) সহজেই দৃশ্যমান হয়। যেমন, কেউ যদি গুগলে "আমার কাছাকাছি রেস্টুরেন্ট" লিখে সার্চ করে, তখন গুগল ম্যাপ ও লোকাল প্যাক-এ আপনার ব্যবসার তথ্য দেখানোর সম্ভাবনা বাড়ে।

বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি: একটি সম্পূর্ণ এবং ভেরিফায়েড GMB প্রোফাইল কাস্টমারের কাছে আপনার ব্যবসাকে আরও পেশাদার এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: গ্রাহকরা সরাসরি আপনার প্রোফাইলে ফোন নম্বর, ওয়েবসাইট বা মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে।

রিভিউ এবং ফিডব্যাক: গ্রাহকরা তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রিভিউ দিতে পারে, যা নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করে।

ধাপে ধাপে গুগল মাই বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করার প্রক্রিয়া

একটি কার্যকর GMB প্রোফাইল তৈরি করতে নিচে দেওয়া ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

ধাপ ১: গুগল অ্যাকাউন্ট তৈরি করা এবং GMB প্রোফাইল অ্যাক্সেস করা

প্রথমেই আপনার একটি গুগল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। যদি না থাকে, তাহলে একটি তৈরি করে নিন। এরপর google.com/business -এ গিয়ে "Manage now" বাটন-এ ক্লিক করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করুন।

ধাপ ২: ব্যবসার নাম এবং ধরন যুক্ত করা

ব্যবসার নাম: আপনার ব্যবসার সঠিক এবং অফিসিয়াল নাম লিখুন। এটি আপনার ট্রেড লাইসেন্স বা অন্যান্য নথিতে যেমন আছে তেমনই হওয়া উচিত।

ব্যবসার ধরন: আপনার ব্যবসাটি কি অনলাইনে কাস্টমারকে পণ্য সরবরাহ করে, নাকি নির্দিষ্ট ঠিকানায় সার্ভিস দেয়, নাকি উভয়ই করে তা নির্বাচন করুন।

ধাপ ৩: ব্যবসার ঠিকানা এবং সার্ভিস এলাকা যুক্ত করা

ঠিকানা: আপনার ব্যবসার সঠিক ঠিকানা দিন। গুগল এই ঠিকানাটি ম্যাপে দেখাবে।

সার্ভিস এরিয়া: আপনি যদি নির্দিষ্ট এলাকায় সার্ভিস দেন (যেমন, ইলেকট্রিশিয়ান বা প্লাম্বার), তাহলে সেই এলাকা বা এলাকার পিন কোড যুক্ত করুন।

ধাপ ৪: ব্যবসার ক্যাটাগরি নির্বাচন

আপনার ব্যবসা কোন ক্যাটাগরির অধীনে পড়ে, তা নির্বাচন করুন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আপনার ব্যবসা যদি একটি রেস্টুরেন্ট হয়, তাহলে প্রধান ক্যাটাগরি হিসেবে "Restaurant" নির্বাচন করুন। আপনি একাধিক সহায়ক ক্যাটাগরিও যোগ করতে পারেন (যেমন, "Pizza Restaurant" বা "Italian Restaurant")।

ধাপ ৫: ব্যবসার যোগাযোগের তথ্য যুক্ত করা

ফোন নম্বর: একটি সঠিক এবং সক্রিয় ফোন নম্বর যুক্ত করুন।

ওয়েবসাইট: যদি আপনার কোনো ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে তার লিংক যুক্ত করুন।

ধাপ ৬: প্রোফাইল ভেরিফিকেশন

প্রোফাইল তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভেরিফিকেশন। গুগল আপনার ব্যবসার মালিকানা নিশ্চিত করতে এটি করে। সাধারণত, ভেরিফিকেশনের জন্য কয়েকটি পদ্ধতি থাকে:

পোস্টকার্ড দ্বারা ভেরিফিকেশন: গুগল আপনার দেওয়া ঠিকানায় একটি পোস্টকার্ড পাঠাবে, যেখানে একটি ভেরিফিকেশন কোড থাকবে। এই কোডটি GMB প্রোফাইলে প্রবেশ করিয়ে ভেরিফাই করতে হবে। এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।

ফোন বা ইমেল দ্বারা ভেরিফিকেশন: কিছু ক্ষেত্রে গুগল ফোন কল বা ইমেলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভেরিফিকেশনের সুযোগ দেয়।

GMB প্রোফাইল অপ্টিমাইজ করার কৌশল

শুধুমাত্র একটি প্রোফাইল তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, এটিকে লোকাল SEO-এর জন্য অপ্টিমাইজ করতে হবে।

গুগল মাই বিজনেস অপটিমাইজেশন করার কৌশল-Google my business optimization technique১. সঠিক NAP (Name, Address, Phone) তথ্য নিশ্চিত করুন

আপনার ব্যবসার নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর (NAP) তথ্য সব জায়গায় (ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিরেক্টরি সাইট) একই হওয়া উচিত। এটি গুগলের কাছে আপনার ব্যবসার তথ্যকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

২. আকর্ষণীয় ছবি যুক্ত করুন

উচ্চ মানের ছবি যুক্ত করুন। এতে আপনার দোকান বা অফিসের ভেতরের এবং বাইরের ছবি, আপনার পণ্য বা সার্ভিস, এবং আপনার টিমের ছবি থাকতে পারে। প্রোফাইলে অন্তত ৫-১০টি ছবি যুক্ত করার চেষ্টা করুন।

৩. কাস্টমার রিভিউ সংগ্রহ করুন

গ্রাহকদের কাছে রিভিউ দেওয়ার অনুরোধ করুন। ইতিবাচক রিভিউ আপনার র‍্যাঙ্কিং-এ সাহায্য করে। নেতিবাচক রিভিউ পেলেও পেশাদারভাবে এবং দ্রুত তার উত্তর দিন।

৪. নিয়মিত পোস্ট এবং অফার যুক্ত করুন

আপনার প্রোফাইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট, অফার, ইভেন্ট বা পণ্যের আপডেট যুক্ত করুন। এটি গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ রাখতে এবং আপনার প্রোফাইলকে সক্রিয় দেখাতে সাহায্য করে।

৫. FAQ সেকশন ব্যবহার করুন

সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তর (FAQ) যুক্ত করে গ্রাহকের প্রশ্নগুলোর আগাম উত্তর দিতে পারেন। এটি গ্রাহকের জন্য তথ্য সংগ্রহ সহজ করে তোলে।

৬. ব্যবসার বিবরণ (Business Description) সঠিকভাবে লিখুন

ব্যবসার বিবরণ সেকশনে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। এতে কিওয়ার্ড (Keywords) ব্যবহার করুন যা আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত। যেমন, আপনার রেস্টুরেন্ট যদি পিজ্জা তৈরি করে, তাহলে বিবরণে "সেরা পিজ্জা" বা "ফ্রেশ পিজ্জা" শব্দগুলো ব্যবহার করুন।

নতুন ব্যবসার জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস

শুরুতেই প্রোফাইল তৈরি করুন: ব্যবসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই GMB প্রোফাইল তৈরি করুন।

মোবাইল ফ্রেন্ডলি রাখুন: যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল থেকে সার্চ করে, তাই আপনার প্রোফাইলের তথ্য যেন মোবাইলে দেখতে সহজ হয়, তা নিশ্চিত করুন।
নতুনদের জন্য গুগল মাই বিজনেস।
প্রোফাইলকে আপ-টু-ডেট রাখুন: ছুটির দিনে আপনার ব্যবসার সময় পরিবর্তন হলে বা নতুন কোনো পণ্য এলে প্রোফাইলে তা আপডেট করুন।

গুগল মাই বিজনেস প্রোফাইল তৈরি এবং অপ্টিমাইজ করা কোনো একদিনের কাজ নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে এবং নিয়মিত প্রোফাইল আপডেট করে আপনি আপনার ব্যবসার অনলাইন উপস্থিতি অনেক শক্তিশালী করতে পারেন।

Next Post Previous Post